ঢাকা , বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫ , ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
মূল ফোকাস জাতীয় নির্বাচন টার্গেট ফেব্রুয়ারি এপ্রিল : সিইসি প্রতিবছর জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণের অঙ্গীকার জুলাই শহীদ স্মৃতি বৃত্তি’ চালু করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার ইস্যুতে ঐকমত্যে অনিশ্চয়তা ইরান থেকে ঢাকায় পৌঁছালেন ২৮ বাংলাদেশি ২৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে হবে বিদ্যুতের ১০ সাবস্টেশন নির্মাণ হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনিদের দ্রুত বিচারের দাবি শেষবারের মতো পর্দায় ফিরছে ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ শুধু পুরুষদের বিনোদনের জন্য ভাবা হতো আমাকে : স্কারলেট মাফিয়া চক্র নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন আমির খান বিজয়ের সঙ্গে প্রেমের গুজব নিয়ে মুখ খুললেন ফাতিমা এবার পাইরেসির কবলে পড়লো ‘কান্নাপ্পা’ ব্যস্ততার মাঝেই জন্মদিন পালন করলেন জয়া শাকিব খানকে ‘মেগাস্টার’ বলতে নারাজ জাহিদ হাসান নিজের মৃত্যুর গুজব নিয়ে যা জানালেন মাহি আবারও ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস অভিযোগ আমলে নিয়ে পলাতক ২৬ জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ ছয় মাসে কর্মস্থলে ঝরেছে ৪২২ শ্রমিকের প্রাণ

কক্সবাজার জেলার ১৭ পয়েন্ট অধিক ঝুঁকিপূর্ণ

  • আপলোড সময় : ০২-০৫-২০২৫ ০৭:৩৭:২৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০২-০৫-২০২৫ ০৭:৩৭:২৪ অপরাহ্ন
কক্সবাজার জেলার ১৭ পয়েন্ট অধিক ঝুঁকিপূর্ণ
বঙ্গোপসাগরের মাঝে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। এ দ্বীপে জন্ম নেয়া শিশু সুনাম শীল বুঝেছেন সাগরের বুকে টিকে থাকতে হলে তাকে প্রকৃতির সাথে লড়াই করতে হবে। চৌদ্দ বছর বয়সেই সুনাম উপলব্ধি করেছেন প্রকৃতির বৈরিতা, টের পেয়েছেন ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াল আগ্রাসন।
বৈশাখের প্রচন্ড খরতাপ। কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইলের বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প সংলগ্ন ভাঙা বাাঁধে দাঁড়িয়ে কথা হয় সুনামের সঙ্গে। আক্ষেপের সাথে সুনাম বলছিলেন, এখানে জীবন কঠিন। সমুদ্রের পানি বাড়িতে চলে যায়, ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। সুনামের সাথে দু’কিলোটার দূর থেকে এসেছিলেন এগারো বছরের দীপঙ্কর শীল রকিও। এর মধ্যে সুনাম কুতুবদিয়া মডেল হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণী ও দীপঙ্কর কুতুবদিয়া মডেল কিন্ডার গাটেনের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তারা বাঁধের দাবিতে ফেস্টুন হাতে প্রতিবাদ জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন সাগর কিনারে। যেখানে লেখা ছিল, সাগরের পানি চাইনা ঘরে, আমাদের দাবি সরকারের তরে। এই শিশুদের সাথে যখন আলাপ হচ্ছিলো সাগরে তখন পূর্ণ জোয়ার। তখনই অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকা ৩০ কোটি টাকার বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প সংলগ্ন ভাঙা বাঁধ দিয়ে প্রবলভাবে লোকালয়ে প্রবেশ করছিল জোয়ারের পানি। কক্সবাজারের উত্তরের উপজেলা কুতুবদিয়া। এ দ্বীপের চারপাশে টেকসই বাঁধের দাবি দীর্ঘদিনের।
কিন্তু সেই বেড়িবাঁধের স্বপ্ন, দাবি তিমিরেই রয়ে গেল। তাই এবার বড়দের সাথে দীপ রক্ষার আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন নতুন প্রজন্মও। প্রশাসনের তথ্য অনুয়ায়ী, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কুতুবদিয়া উপজেলা। ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল ৯৯ দশমিক ৭৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ। প্রাণ হারায় অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে কয়েক হাজার পরিবার। সেই কালরাত্রির নানা ঘটনা এখনো উপকূলীয় এলাকার লোকের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু এতো প্রাণ-সম্পদহানির ৩৪ বছর পরও মানুষের সুরক্ষায় গড়ে উঠেনি টেকসই বেড়িবাঁধ। উপকূলে এখন প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাটা। স্বজন হারানোর চোখেও কেবল বিভীষিকা। ইউনুছ হারিয়েছেন ৭৩ স্বজন : উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের পিল্লার পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউনুছ। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে তাদের বংশের ৭৩ জন স্বজনকে হারিয়েছেন। জেলে ইউনুছ এখনো ৩৪ বছর আগের ভয়াল স্মৃতি বয়ে বেড়ান নিত্যদিন। গত রোববার পড়ন্ত বিকেলে পশ্চিমে সাগর আর কিল্লার পাড়ার ভাঙ্গা বাঁধে হাঁটতে হাঁটতে ইউনুছ স্মৃতিচারণ করে বললেন, ৯১-র তুফানের সময় আমার দুই বোন, দুই ভাতিজাসহ বংশের ৭৩ জন স্বজন মারা গেছেন। তাদের কেউ পানির তোড়ে ভেসে গেছে, কেউ মারা যায় গাছ কিংবা দেয়াল চাপায়। কারো লাশ পাইনি।
ইউনুছ বলেন, নব্বই দশকে ছিল তাঁদের স্বর্ণালী দিন। মাছ, লবণ, ধানসহ কোনো ফসলের কমতি ছিল না। বাপ-দাদার জমিতে ফসল ফলিয়ে চলতো ঘরে তোলার উৎসব। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের পর সেসব ভূমি নিমিষেই চলে গেল অথৈ জলে। আলাপচারিতার এক ফাঁকে পশ্চিমের সাগরের দিকে আঙ্গুলের ইশারা তুলে বললেন, ওই যে দেখছেন মাদার ভেসেল- ওখানেই আমাদের ঘর, জমি সবই ছিল। ৯১’ সালের পর ভাঙতে ভাঙতে আজ এখানে ঠেকছি। ঝুঁকিতে ১৭ পয়েন্ট, বরাদ্দ ৫ কোটি : সরকারি-বেসরকারি একাধিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত তিন দশকে সাগরের ভাঙনে বসতভিটে হারিয়ে কুতুবদিয়ার প্রায় ৬০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। দ্বীপের দক্ষিণে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের খুদিয়ারটেক ও রাজাখালী নামে দু’টি মৌজার তিন হাজার একর জমি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে প্রতিনিয়ত ছোট হচ্ছে সাগরকন্যা খ্যাত এই দ্বীপ।
দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, ১৯৬০ সালের ঘর্ণিঝড়ের পর দ্বীপের চারপাশে উঁচু করে ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বেড়িবাঁধটি ক্ষয়ে যায়। ১৯৯১ সালের ঘর্ণিঝড়ের পরে কয়েকটি এলাকায় বাঁধ সংস্কার হলেও বেশিরভাগ এলাকা এখনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উত্তর ধূরং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম বলেন, আমার ইউনিয়নের মিয়ারাকাটা, আকবরিয়া পাড়া, ঘাটঘরসহ চারটি পয়েন্টে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙা অংশ জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা না গেলে বর্ষায় এসব গ্রামে মানুষ বসবাস করতে পারবে না।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্যথোয়াইপ্রু মারমা বলেন, আলী আকবর ডেইলের বায়ুবিদ্যুৎ এলাকা দিয়ে জোয়ারের পানি ঢ়ুকে ফসলহানি হচ্ছে। বর্ষার আগেই যেসব ভাঙা অংশ রয়েছে তা মেরামত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, পেকুয়া, কক্সবাজার সদরসহ জেলার উপকূলীয় এলাকার ১৭টি পয়েন্ট বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব পয়েন্ট জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ৫০ কোটি টাকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ৫ কোটি টাকার বরাদ্দ নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে, কুতুবদিয়াকে সুপার ডাইকের আওতায় আনতে ইতোমধ্যে সমীক্ষা শেষ করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করার কাজ চলছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য